বড় রাস্তার মোড়ে জুতা দোকানে, জুতোর পাশাপাশি ফুল বিক্রি
হচ্ছে। সকাল সকাল এই রকম একটা দৃশ্য নাগরিকের মন খারাফ করে দিল। মন খারাফ নিয়ে
একটা দিন শুরু করতে নেয়, মনকে ভালো করতে হবে। মুহূর্তে মন ভালো করে ফেলার কোন যাদু
মন্ত্র নাগরিকের জানা নেয়। তবে জুতোর দোকানে ফুল বিক্রির কারন ইচ্ছে করলেই জানতে
পারা যাবে। নাগরিকের ইচ্ছে করছে না, নগরের বুকে এই রকম বেমানান একটা দৃশ্যপটের
ইতিবিত্তি জানতে ইচ্ছে করছে না। অনিচ্ছাকে সঙ্গি করে নাগরিক পা বাড়ায় গনি মিয়াঁর
চা দোকানে। গনি মিয়াঁর দোকানেও দেখা যাচ্ছে অত্যাদিক যত্ন সহকারে বালতি ভর্তি
গোলাপ রেখেছে। নাগরিকের বুঝতে বাকী রইল না আজ বিশেষ কোন দিন। আজকাল নিয়ম হয়েছে
বিশেষ দিনে বিশেষ ব্যবসা।
-
কি গনি মিয়াঁ? কয়খানা ফুল?
-
বেশী না, শ-খানেক তুলছি, তবে আগামী দিন আরও বেশী থাকব।
-
বেচা বিক্রি কেমন?
-
মন্দ না, দুপুর নাগাদ শেষ হইয়া যাইব।
-
আজ কোন দিবস যাচ্ছে?
-
ভাইজান যে কি কওন, কোন খবর রাখেন না বুঝি। আজ বাংলা ফাল্গুন
মাসের পহেলা দিন, তবে দিবসটা কি আমিও কিলিয়ার না।
-
তোমার কিলিয়ার হওয়ার কোন দরকার নাই, তুমি কিলিয়ার হইলেও আজ
বসন্ত, না হইলেও আজ বসন্ত।
-
ভাইজান চা দিমু একখান?
-
না, একখান ফুল দাও।
হাতে একখানা গোলাপ ফুল নিয়ে নাগরিক হাটতে শুরু
করেছে।রাস্তায় চলাচলকারী দের মধ্যে বসন্ত বসন্ত ভাব আছে। কিছুক্ষণ পরপর হলুদ
বর্ণের অলোকছটা চোখে পড়ছে। ঋতু রাজ বসন্তের আগমনকে স্বাগতম জানাতে মানুষের এই
প্রস্তুতি। মানুষের এইরকম প্রস্তুতি দেখে ভালো লাগছে, মন খারাফ ভাবটা কেটে যাচ্ছে।
নাগরিকের বাসন্তী কিংবা হলুদ রঙের কোন পোশাক নেয়, থাকলে চট করে পরে আসা যেত। তবে
হলুদ রঙের এক খানা গামছা আছে, গামছা মাথায় দিয়ে সারা শহর ঘুরে বেড়াবে কিনা বুঝতে
পারছে না। বসন্তের এই প্রথম দিনে আর কি কি করা যায় নাগরিক চিন্তা করছে। গুলশান
সোস্যাইটি তে চির বসন্তের রিক্সা পাওয়া যায়, হলুদ রঙের সেই সব রিক্সার চালকের
গায়েও হলুদ রঙের বিশেষ পোশাক থাকে। সারাদিন চির বসন্তের রিক্সায় ঘুরে বেড়ানো যেতে
পারে। তবে সব কিছুর আগে হাতের ফুলটা মাইনাস করতে হবে। ফুলটা দিতে হবে এমন কাউকে
যার কাছে এই উপহারটা হবে অপ্র্যাশিত। এই রকম কারো মুখ এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না।
মোড়ের জুতা দোকানদার কে দিলে কেমন হয়? এইটা নিশ্চয় তার কাছে অপ্র্যাশিত উপহার হবে।
জুতো দোকানদারকে একটা অপ্রত্যাশিত উপহার দিতে নাগরিক এই মুহূর্তে
মোড়ের সেই দোকানের সামনে। হ্যাঙলা করে ফর্সা একটা ছেলে জুতো দোকানের সামনের দিকে
ফুল নিয়ে বসে আছে।
-
হ্যালো ভাই, দোকানের মালিক কে ডাকুন তো।
-
কেন? আপনে কে?
-
উনাকে ডাকুন, উনাকে বলি আমি কে?
-
ভাই, মালিক তো নাই। ম্যানাজার সাহেব আছেন।
-
উনাকেই ডাকেন।
কয়েক সেকেন্ড ব্যবধানে বেঁটে করে
একজন লোক বের হয়ে আসল। বড় বড় চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, ভাই সাহেব, আপনার পরিচয়?
-
আমি রাজধানী জুতা দোকানদার সমিতির সম্মানিত সভাপতি রজব আলী
ভাইয়ের খাস লোক। এই বিশেষ দিনে জনগন কে জুতা দেখিয়ে ফুল বিক্রির এই বিশেষ আয়জনে
খুশি হয়ে উনি ছোট্ট উপহার পাঠিয়েছে। এই গোলাপ খানি আপনাদের জন্য।
ম্যানেজার সাহেব গভীর চিন্তা পড়ে
গেলেন। ডান হাতে ফুল গ্রহন করলেন। কি জবাব দিবেন বুঝে উঠতে পারছে না। তার চিন্তার
সম্পূর্ণটা জুড়ে এখন নিশ্চয় খেলা করছে “রাজধানী জুতা দোকানদার সমিতি” আর “রজব আলী”
এই নাম দুটো। ম্যানেজারের চিন্তার ঘোর কাটার আগেই কেটে পড়তে হবে। কেটে পড়ার আগে
ম্যানেজার সাহেব কে আরেকটু নির্দেশনা দিলে মন্দ হয় না।
-
ম্যানেজার সাহেব, আপনাদের জন্য রজব ভাইয়ের বিশেষ নির্দেশনা
আছে। আসছে বছর এই দিনে দোকানে একটা ব্যানার ঝুলানোর ব্যবস্থা করবেন। ব্যানারে লিখা
থাকবে, “জুতা কিনুন আর নাই কিনুন, আজ বসন্ত”।
জুতা দোকানদারের হাতের গোলাপ ফুল
খানি তুলে দিয়ে নাগরিক পা বাড়াল নগরের পথে, আজ এই বসন্তের পথে............।।
(১৩/০২/২০১৭, ঢাকা)