নাগরিকের পথচলা


পাবলিক বাস গুলোর ইঞ্চি ইঞ্চি জায়গাও পাবলিক সার্ভিসে নিয়োজিত। এক ইঞ্চি জায়গা ফাঁকা পাওয়া যায় না। সিট থেকে সিটের দূরত্বও হয় ইঞ্চি মেপে। এই ইঞ্চি ইঞ্চি মাপা জায়গায় মোটা তাজা মানুষদের পোষায় না, নাগরিক মোটা তাজা গ্রুফের মানুষ নয়। ইঞ্চি মাপা জায়গা তার সয়ে যায়। তবে আজ একটু ব্যতিক্রম হল। বাস প্রায় ফাঁকা, মাঝখানের এক সারি সিট পুরোই উধাও। সেই উধাও সারির পরের সিটে বসল নাগরিক। বসেই সামনের খোলা জায়গায় পায়ের উপর পা তুলে দিল। নাকের উপর থেকে জানালার গ্লাস সামনের দিকে ঠেলে দিল। সামনের সীটের যাত্রীর সাথে আজ আর জানালা ঠেলা ঠেলির দুশ্চিন্তা নেয়। আরাম আরাম লাগছে, পরিবেশটা ব্যক্তিগত মনে হচ্ছে। বর্ষার বৃষ্টি ভেজা বাতাস জানালা দিয়ে ঢুকে পড়ছে। নাগরিক জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে, যাই দেখছে তাই ভালো লাগছে। রাস্তায় একজন বুক পর্যন্ত গেঞ্জি উঠিয়ে পেট চুলকাচ্ছে, এই দৃশ্য দেখতেও ভালো লাগছে। এই রকম আনন্দকে নির্দিষ্ট গন্তব্যের সীমা রেখায় বেধে ফেলা ঠিক হবে না। বাস যে পর্যন্ত যাবে যাক, তার আগে নামার কোন পরিকল্পনা নাগরিকের নেই। বাসের হেল্পার এসেছে ভাড়া নিতে,
-   ভাড়া দেন। 
-   কত দেব?
-   কই যাইবেন?
-   বাস যতদুর, আমিও ততদুর। মাঝ পথে ওয়াক আউট করার কোন সম্ভবনা নেয়। বাস কই যাবে বল?
-   আজিমপুর।
-   ইন্নারইল্লাহ। গোরস্থানে? গোরস্থানে হলে গোরস্থান, ভাড়া কত বল?
-   বিশ ট্যাকা দেন।
-   এই নে তিরিশ, দশ টাকা এক্সট্রা। তোর বাসে চড়ে আমি খুবই আনন্দিত, আনন্দে থাকলে মন কিছু দিতে চায়।

বাসের ছেলেটা হ্যাঁ করে তাকিয়ে আছে। বড় কোন ভুল করেছে কিনা ভাবছে। তার হ্যাঁ করে তাকিয়ে থাকা দেখতে ভালো লাগছে। ইচ্ছে করছে এই হ্যাঁ করে তাকিয়ে থাকার জন্য আরও দশ আঁকা দিয়ে দিতে। কিন্তু এই ছেলে এতো লোড নিতে পারবেনা। দেখেই বোঝা যাচ্ছে দুই বেলা ভাতের অতিরিক্ত লোড এই ছেলে নিতে অভ্যস্থ নয়। এই রকম ভাবে বাসে চলা ফেরায় নাগরিকও অভ্যস্থ নয়। জানালা দিয়ে বাহিরের পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে থাকতে অভ্যস্থ চোখ জোড়া আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আকাশে মেঘ ছুটে যাচ্ছে, বাসও ছুটে চলেছে। নাগরিকের খুব ইচ্ছে গান শুনতে। নাগরিক গুণ গুণ করে গান ধরল..............., “এই পথা যদি না শেষ, হয় তবে কেমন হবে বলতো”............।।